ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এবারের মিস ইউনিভার্সে কী হয়েছিল মেক্সিকান সুন্দরী ফাতিমা বশের সঙ্গে? স্বপ্ন নিয়েতে লিখতে এসে যেভাবে নিজেকে ‘আবিষ্কার’ করলাম যে ৫ উপায়ে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি হবেন আরও সুখী বিসিএসে রিপিট ক্যাডার বন্ধ কেন জরুরি, এতে লাভ কার? জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিয়োগ, পদ ১০১ ৫০তম বিসিএস: নন-ক্যাডার পদ নির্ধারিত না হওয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব ‘সিন্ডিকেট’ ছেড়ে আফসোস করি: তাসনুভা তিশা জন্মদিনে নানা রকম মিম, রইল ১২টি ছবি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আর কিছু বলতে চান না অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী আর্জেন্টিনা দলের সবার শরীরে ট্যাটু, আলভারেজের নেই কেন

কক্সবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:২৫:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

১০ বছরে প্রায় চার গুণ বেড়েছে কক্সবাজারে বিদ্যুতের চাহিদা। ২০১৪ সালে উপকূলের এই জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪২ মেগাওয়াট। সময়ের ব্যবধানে আজ তা ১৫০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। তবে চাহিদা বাড়লেও তা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো অগ্রগতি প্রায় নেই বললেই চলে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুতের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজার এখনো নির্ভরশীল জীবাশ্ম জ্বালানি গণ্ডিতেই।

এই বাস্তবতার প্রধান দুটি কারণ হলো নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা নিয়ে অদক্ষতা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও তদারকির অভাবে অগ্রগতি থেমে গেছে অতীতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর। কুতুবদিয়ার দুটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথাই ধরা যাক। ওই দুই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। অথচ আজ পর্যন্ত সেগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। টেকনাফের ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা খুরুশকুল-ভারুয়াখালীর ৬০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রও প্রত্যাশিত ফল দিচ্ছে না।

জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের ভৌগোলিক অবস্থান, সমুদ্র উপকূলের স্থায়ী বাতাস ও উজ্জ্বল সৌরবিকিরণ, এর সবই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপযোগী পরিবেশ। অথচ সেসব সম্ভাবনা রূপ নিচ্ছে না বাস্তব উদ্যোগে।

এ অবস্থায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত রোডম্যাপ, যা বাস্তবসম্মত ও স্থানিক বাস্তবতায় প্রযোজ্য হবে। প্রথমত, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের মতো স্থানে প্রকল্পগুলো কেন ব্যর্থ হলো, তার কারণ অনুসন্ধান ও দায় নিরূপণও জরুরি। দ্বিতীয়ত, শহরের সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও টমটম গ্যারেজের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন কার্যক্রমকে গতিশীল করা উচিত। এ ছাড়া আবাসিক হোটেল ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোকে নীতিমালার আওতায় এনে বাধ্যতামূলক সৌর প্যানেল স্থাপন করলে বিদ্যুতের চাপও কমে যাবে। তৃতীয়ত, উপকূলীয় নদী ও জলাশয়ে ভাসমান সৌর প্যানেল স্থাপন এবং বেসরকারি খাতকে কর-সুবিধা ও প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

মনে রাখা দরকার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি কেবল বিদ্যুতেরই বিকল্প উৎস নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। কক্সবাজারের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে এই খাতে অবহেলা করা মানে শুধু বিদ্যুৎ-সংকট নয়, বরং পরিবেশ ও অর্থনীতির ক্ষতি একসঙ্গে করা। এখনই যদি সরকার জবাবদিহিমূলক পরিকল্পনা ও বিজ্ঞাননির্ভর তদারকি শুরু না করে, তবে কক্সবাজারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভাবনা ইতিহাসের ব্যর্থ অধ্যায় হিসেবেই থেকে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কক্সবাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

আপডেট সময় : ০৫:২৫:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

১০ বছরে প্রায় চার গুণ বেড়েছে কক্সবাজারে বিদ্যুতের চাহিদা। ২০১৪ সালে উপকূলের এই জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪২ মেগাওয়াট। সময়ের ব্যবধানে আজ তা ১৫০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। তবে চাহিদা বাড়লেও তা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো অগ্রগতি প্রায় নেই বললেই চলে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুতের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজার এখনো নির্ভরশীল জীবাশ্ম জ্বালানি গণ্ডিতেই।

এই বাস্তবতার প্রধান দুটি কারণ হলো নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা নিয়ে অদক্ষতা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঘাটতি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও তদারকির অভাবে অগ্রগতি থেমে গেছে অতীতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর। কুতুবদিয়ার দুটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথাই ধরা যাক। ওই দুই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। অথচ আজ পর্যন্ত সেগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। টেকনাফের ২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র কিংবা খুরুশকুল-ভারুয়াখালীর ৬০ মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্রও প্রত্যাশিত ফল দিচ্ছে না।

জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা ২০২৫ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আহরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজারের ভৌগোলিক অবস্থান, সমুদ্র উপকূলের স্থায়ী বাতাস ও উজ্জ্বল সৌরবিকিরণ, এর সবই নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপযোগী পরিবেশ। অথচ সেসব সম্ভাবনা রূপ নিচ্ছে না বাস্তব উদ্যোগে।

এ অবস্থায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত রোডম্যাপ, যা বাস্তবসম্মত ও স্থানিক বাস্তবতায় প্রযোজ্য হবে। প্রথমত, কুতুবদিয়া ও টেকনাফের মতো স্থানে প্রকল্পগুলো কেন ব্যর্থ হলো, তার কারণ অনুসন্ধান ও দায় নিরূপণও জরুরি। দ্বিতীয়ত, শহরের সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও টমটম গ্যারেজের ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন কার্যক্রমকে গতিশীল করা উচিত। এ ছাড়া আবাসিক হোটেল ও বাণিজ্যিক ভবনগুলোকে নীতিমালার আওতায় এনে বাধ্যতামূলক সৌর প্যানেল স্থাপন করলে বিদ্যুতের চাপও কমে যাবে। তৃতীয়ত, উপকূলীয় নদী ও জলাশয়ে ভাসমান সৌর প্যানেল স্থাপন এবং বেসরকারি খাতকে কর-সুবিধা ও প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

মনে রাখা দরকার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি কেবল বিদ্যুতেরই বিকল্প উৎস নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি। কক্সবাজারের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে এই খাতে অবহেলা করা মানে শুধু বিদ্যুৎ-সংকট নয়, বরং পরিবেশ ও অর্থনীতির ক্ষতি একসঙ্গে করা। এখনই যদি সরকার জবাবদিহিমূলক পরিকল্পনা ও বিজ্ঞাননির্ভর তদারকি শুরু না করে, তবে কক্সবাজারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্ভাবনা ইতিহাসের ব্যর্থ অধ্যায় হিসেবেই থেকে যাবে।