চালকের আসনে সরকার, সিদ্ধান্তও তাদের দিতে হবে
- আপডেট সময় : ০৪:৫৬:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ৩ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারকাজে হাত দিয়েছিল, সেই সংস্কার বিষয়ে অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা ছিল না। এটা আইনের সংস্কার, সার্বিকভাবে নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার। এই সংস্কারপ্রক্রিয়ায় অনেক আইনি বিষয়েও আগে থেকে অনেকের ধারণা ছিল না। সে কারণে আলোচনা যত এগোচ্ছে, ততই পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
এই সরকারকে অনেকে জনগণের অভিপ্রায়ে গঠিত সরকার বলছে। অনেকে বলছে বিপ্লবের পরে পরিবর্তনের অভিপ্রায়ে গঠিত সরকার। সংবিধান রক্ষা করার অঙ্গীকার করে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু সংবিধানের বৃত্তের মধ্যে থেকে অনেক পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।
ঐকমত্য কমিশন গঠন ও পরবর্তী সময়ে সরকার ছিল অনুঘটকের ভূমিকায়। কিন্তু পরে দেখা গেল, সরকার হাত গুটিয়ে নিল। ঐকমত্য কমিশনে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলো। তবে অনেক প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া হয়। যারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে তারা বলেছিল, সরকার গঠনের পরে তারা জনগণের কাছে যাবে এবং জনগণের রায় অনুযায়ী সেটি তারা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সরকার নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে দিল। এই নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হলো। ভিন্নমত তুলে দিয়ে সরকার রাজনীতি দলগুলোকে মুখোমুখি করে দিল।
জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার রায় ঠিকই রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিল। সরকার ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আট মাস ধরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। কিন্তু এখন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিবে। এটি সরকারের একধরনের বাতুলতা। এভাবে কোনো সমাধান হবে না। যে কারণে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।
সরকার এটি কোনো অভিমান থেকে বলেছে কি না, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোকে মুখোমুখি করা হলো। এর আগে সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছে, তা সব দল মানেনি। এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটি যে সবাই মানবে, সেই ভরসা করা উচিত নয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন কীভাবে করা যায়, সেটি সরকারকে চিন্তা করতে হবে।
দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে কথা বলতে হবে সরকারকে। এর মধ্য থেকে পথ বের করে আনতে হবে। নইলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে, বিতর্ক বাড়বে। এখন সব দায়িত্ব সরকারের। সরকার এখন চালকের আসনে, অনুঘটকের আসনে নয়। নির্বাচন এবং ট্রানজিশনের এই সময়ে সরকারকে নেতৃত্ব দিতে হবে। আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকে সংকট সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। দেশের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো আগেও ছাড় দিয়েছে, এখনো ছাড় দেবে বলে আশা করা যায়।
















