ঢাকা ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
এবারের মিস ইউনিভার্সে কী হয়েছিল মেক্সিকান সুন্দরী ফাতিমা বশের সঙ্গে? স্বপ্ন নিয়েতে লিখতে এসে যেভাবে নিজেকে ‘আবিষ্কার’ করলাম যে ৫ উপায়ে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি হবেন আরও সুখী বিসিএসে রিপিট ক্যাডার বন্ধ কেন জরুরি, এতে লাভ কার? জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিয়োগ, পদ ১০১ ৫০তম বিসিএস: নন-ক্যাডার পদ নির্ধারিত না হওয়ায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব ‘সিন্ডিকেট’ ছেড়ে আফসোস করি: তাসনুভা তিশা জন্মদিনে নানা রকম মিম, রইল ১২টি ছবি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আর কিছু বলতে চান না অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী আর্জেন্টিনা দলের সবার শরীরে ট্যাটু, আলভারেজের নেই কেন

চীন যেভাবে বিদেশে স্বৈরাচারী শাসন ‘রপ্তানি’ করছে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৫:২৭:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
আজকের জার্নাল অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কিরগিজস্তানে ২০২০ সালের অক্টোবরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের পর রাজধানী বিশকেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৬টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ভোটসীমা পেরোতে সক্ষম হয়। এই চার দলের তিনটির সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সোরনবাই জিনবেকভের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

কিরগিজস্তানের শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ চীন তখন এই অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় বেশ সংযম দেখিয়েছে। তবে সংযম তারা দেখিয়েছে এমনভাবে, যা ইঙ্গিত দেয়, গণতন্ত্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, ‘চীন আন্তরিকভাবে আশা করে, কিরগিজস্তানের সব পক্ষ আইনের মাধ্যমে, সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে এবং যত দ্রুত সম্ভব স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।’

২০২২ সালের শুরুর দিকে কাজাখস্তানে বেসামরিক বিক্ষোভ দমনে সরকার যখন সহিংস পন্থা বেছে নেয়, তখন চীনের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। চীন প্রকাশ্যে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ত তোকায়েভকে সমর্থন জানায় এবং তাঁর দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ঘোষণা দেয়, ‘বিদেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা’ এই অস্থিরতার জন্য দায়ী।

তোকায়েভের কঠোর অবস্থানের কারণে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও চীন তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন চীন প্রতিবেশী দুই দেশে সংঘটিত দুই ধরনের গণ-অভ্যুত্থানে একটির ক্ষেত্রে সংযত ও অন্যটির ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল?

আমার সদ্য প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আজকের বিশ্বে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রচারের একটি বিস্তৃত প্যাটার্নে এর উত্তর লুকিয়ে আছে।

গবেষকেরা সাধারণত ধরে নেন, স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থাগুলো একধরনের সুসংগঠিত মতাদর্শ বিদেশে ‘রপ্তানি’ করতে চায়, যেমনটি সোভিয়েত ইউনিয়ন শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিজম প্রচারের ক্ষেত্রে করেছিল। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম বিস্তার করতে চায়। তারা একদলীয় শাসন ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকে এমন এক মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, যা অন্য অনুগত সরকারগুলো গ্রহণ করতে পারে।

কিন্তু আজকের দিনে খুব কমসংখ্যক স্বৈরশাসকের একক মতাদর্শ আছে। তার বদলে, বেইজিংয়ের মতো দমনমূলক সরকারগুলো দেখাতে চায়, স্বৈরাচারী শাসনই বাস্তব জীবনের প্রশাসনিক সমস্যা বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সবচেয়ে যুক্তিসংগত সমাধান; অর্থাৎ তারা স্বৈরাচারকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন এটি স্বাভাবিক ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা।

এর পর থেকে কাজাখস্তানও তার স্বৈরাচারী পথে এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেখানে নতুন একটি গণমাধ্যম আইন কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি গণমাধ্যম ও তাদের প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি বাতিল করার ক্ষমতা পায়।

আমি একে বলি ‘স্বৈরাচার বাণিজ্যিকীকরণ’। যেমন কোনো পণ্য ভোক্তার পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী আলাদা উপায়ে বিপণন করা হয়, তেমনি চীনও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে স্বৈরাচারী চর্চাকে উৎসাহিত করে।

কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তানের উদাহরণ এই গতিশীলতারই প্রতিফলন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে কিরগিজস্তানকে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখা হতো। সেখানে সক্রিয় রাজনৈতিক বিরোধী দল, প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছিল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, চীন সেখানে যা করছে, তাকে আমি আমার গবেষণায় ‘রক্ষণাত্মক যুক্তি’ বলেছি। এর অর্থ হলো, চীন কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে স্বৈরাচারী শাসনপদ্ধতিকে গণতান্ত্রিক অস্থিরতা রোধের সম্ভাব্য প্রতিরোধক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কিরগিজস্তানে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং দেশটি ক্রমে আরও গভীরভাবে স্বৈরাচারিতার দিকে নেমে গেছে।

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।ছবি : রয়টার্স

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে। তারা সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছিল, যেন ‘সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে’ দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়। এই বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে বেইজিং ইঙ্গিত দেয়, নির্বাচন; অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিক্ষোভের পর কিরগিজস্তানের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন ফলাফল বাতিল করে। প্রেসিডেন্ট জিনবেকভ ‘রাজনৈতিক শক্তিগুলোর’ বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করার অভিযোগ আনেন এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তিনি শক্তিশালী নেতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।

জিনবেকভের পদত্যাগের পর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক সাদির ঝাপারভ দ্রুত কিরগিজস্তানে ক্ষমতা সংহত করেন। প্রথমে তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে ওই নির্বাচনকে পর্যবেক্ষকেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন বলে সমালোচনা করেছিলেন।

চীন দ্রুত ঝাপারভ সরকারের স্বীকৃতি দেয় এবং একে অস্থিরতার পর স্থিতিশীলতায় ফিরে আসা হিসেবে উপস্থাপন করে। এরপর ২০২৪ সালে কিরগিজস্তান নতুন আইন প্রণয়ন করে। সে আইন সরকারের হাতে আরও ক্ষমতা দেয় এবং ভিন্নমত দমনের পথ প্রশস্ত করে।

অন্যদিকে কাজাখস্তানের চিত্রটি ভিন্ন, যেটিকে আমি ‘সমর্থনমূলক যুক্তি’ বলি। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জ্বালানির দাম বাড়ার প্রতিবাদ সারা দেশে বিক্ষোভে রূপ নিলে চীনা কর্মকর্তারা কাজাখ সরকারের অবস্থানের সঙ্গে নিজেদের সম্পূর্ণ এক রেখায় নিয়ে আসেন। তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, এই অস্থিরতার মূল কারণ ‘সন্ত্রাসবাদ’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ।’

চীন শুধু তোকায়েভকে পুরোপুরি সমর্থন ও তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেনি; বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোটগুলোকেও স্থিতিশীলতা আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখিয়েছে। চীনের মতে, শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শক্ত হাতে পরিচালিত স্বৈরাচারী শাসন।

এর পর থেকে কাজাখস্তানও তার স্বৈরাচারী পথে এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেখানে নতুন একটি গণমাধ্যম আইন কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি গণমাধ্যম ও তাদের প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি বাতিল করার ক্ষমতা পায়।

এ দুটি ঘটনা দেখায়, চীন কীভাবে বিভিন্ন পটভূমিতে নিজের বক্তব্য ও বয়ানকে মানিয়ে নেয়। এই অভিযোজনক্ষমতাই আসলে তার শক্তি।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

  • জুলিয়া সিওরাতি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ফেলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চীন যেভাবে বিদেশে স্বৈরাচারী শাসন ‘রপ্তানি’ করছে

আপডেট সময় : ০৫:২৭:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

কিরগিজস্তানে ২০২০ সালের অক্টোবরে পার্লামেন্ট নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের পর রাজধানী বিশকেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৬টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য নির্ধারিত ভোটসীমা পেরোতে সক্ষম হয়। এই চার দলের তিনটির সঙ্গে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সোরনবাই জিনবেকভের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

কিরগিজস্তানের শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ চীন তখন এই অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় বেশ সংযম দেখিয়েছে। তবে সংযম তারা দেখিয়েছে এমনভাবে, যা ইঙ্গিত দেয়, গণতন্ত্র রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং বলেছেন, ‘চীন আন্তরিকভাবে আশা করে, কিরগিজস্তানের সব পক্ষ আইনের মাধ্যমে, সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে এবং যত দ্রুত সম্ভব স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে।’

২০২২ সালের শুরুর দিকে কাজাখস্তানে বেসামরিক বিক্ষোভ দমনে সরকার যখন সহিংস পন্থা বেছে নেয়, তখন চীনের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। চীন প্রকাশ্যে কাজাখ প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ত তোকায়েভকে সমর্থন জানায় এবং তাঁর দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ঘোষণা দেয়, ‘বিদেশে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা’ এই অস্থিরতার জন্য দায়ী।

তোকায়েভের কঠোর অবস্থানের কারণে শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও চীন তাঁর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন চীন প্রতিবেশী দুই দেশে সংঘটিত দুই ধরনের গণ-অভ্যুত্থানে একটির ক্ষেত্রে সংযত ও অন্যটির ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল?

আমার সদ্য প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, আজকের বিশ্বে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রচারের একটি বিস্তৃত প্যাটার্নে এর উত্তর লুকিয়ে আছে।

গবেষকেরা সাধারণত ধরে নেন, স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থাগুলো একধরনের সুসংগঠিত মতাদর্শ বিদেশে ‘রপ্তানি’ করতে চায়, যেমনটি সোভিয়েত ইউনিয়ন শীতল যুদ্ধের সময় কমিউনিজম প্রচারের ক্ষেত্রে করেছিল। তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম বিস্তার করতে চায়। তারা একদলীয় শাসন ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকে এমন এক মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল, যা অন্য অনুগত সরকারগুলো গ্রহণ করতে পারে।

কিন্তু আজকের দিনে খুব কমসংখ্যক স্বৈরশাসকের একক মতাদর্শ আছে। তার বদলে, বেইজিংয়ের মতো দমনমূলক সরকারগুলো দেখাতে চায়, স্বৈরাচারী শাসনই বাস্তব জীবনের প্রশাসনিক সমস্যা বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সবচেয়ে যুক্তিসংগত সমাধান; অর্থাৎ তারা স্বৈরাচারকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যেন এটি স্বাভাবিক ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা।

এর পর থেকে কাজাখস্তানও তার স্বৈরাচারী পথে এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেখানে নতুন একটি গণমাধ্যম আইন কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি গণমাধ্যম ও তাদের প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি বাতিল করার ক্ষমতা পায়।

আমি একে বলি ‘স্বৈরাচার বাণিজ্যিকীকরণ’। যেমন কোনো পণ্য ভোক্তার পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী আলাদা উপায়ে বিপণন করা হয়, তেমনি চীনও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে স্বৈরাচারী চর্চাকে উৎসাহিত করে।

কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তানের উদাহরণ এই গতিশীলতারই প্রতিফলন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে কিরগিজস্তানকে মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখা হতো। সেখানে সক্রিয় রাজনৈতিক বিরোধী দল, প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছিল।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, চীন সেখানে যা করছে, তাকে আমি আমার গবেষণায় ‘রক্ষণাত্মক যুক্তি’ বলেছি। এর অর্থ হলো, চীন কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে স্বৈরাচারী শাসনপদ্ধতিকে গণতান্ত্রিক অস্থিরতা রোধের সম্ভাব্য প্রতিরোধক হিসেবে উপস্থাপন করেছে। শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া কিরগিজস্তানে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং দেশটি ক্রমে আরও গভীরভাবে স্বৈরাচারিতার দিকে নেমে গেছে।

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে।ছবি : রয়টার্স

২০২০ সালের অস্থিরতার সময় চীনা কর্মকর্তারা ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারবার সতর্ক করেছিল যে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকলে কিরগিজস্তানের উন্নয়ন ব্যাহত হতে পারে। তারা সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছিল, যেন ‘সংলাপ ও পরামর্শের মাধ্যমে’ দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়। এই বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে বেইজিং ইঙ্গিত দেয়, নির্বাচন; অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র শেষ পর্যন্ত দেশকে বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিক্ষোভের পর কিরগিজস্তানের নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন ফলাফল বাতিল করে। প্রেসিডেন্ট জিনবেকভ ‘রাজনৈতিক শক্তিগুলোর’ বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করার অভিযোগ আনেন এবং শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তিনি শক্তিশালী নেতাদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।

জিনবেকভের পদত্যাগের পর জাতীয়তাবাদী রাজনীতিক সাদির ঝাপারভ দ্রুত কিরগিজস্তানে ক্ষমতা সংহত করেন। প্রথমে তিনি নিজেকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। পরবর্তী সময়ে কয়েক মাস পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তবে ওই নির্বাচনকে পর্যবেক্ষকেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন বলে সমালোচনা করেছিলেন।

চীন দ্রুত ঝাপারভ সরকারের স্বীকৃতি দেয় এবং একে অস্থিরতার পর স্থিতিশীলতায় ফিরে আসা হিসেবে উপস্থাপন করে। এরপর ২০২৪ সালে কিরগিজস্তান নতুন আইন প্রণয়ন করে। সে আইন সরকারের হাতে আরও ক্ষমতা দেয় এবং ভিন্নমত দমনের পথ প্রশস্ত করে।

অন্যদিকে কাজাখস্তানের চিত্রটি ভিন্ন, যেটিকে আমি ‘সমর্থনমূলক যুক্তি’ বলি। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জ্বালানির দাম বাড়ার প্রতিবাদ সারা দেশে বিক্ষোভে রূপ নিলে চীনা কর্মকর্তারা কাজাখ সরকারের অবস্থানের সঙ্গে নিজেদের সম্পূর্ণ এক রেখায় নিয়ে আসেন। তাঁরা জোর দিয়ে বলেন, এই অস্থিরতার মূল কারণ ‘সন্ত্রাসবাদ’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপ।’

চীন শুধু তোকায়েভকে পুরোপুরি সমর্থন ও তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করেনি; বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোটগুলোকেও স্থিতিশীলতা আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখিয়েছে। চীনের মতে, শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো শক্ত হাতে পরিচালিত স্বৈরাচারী শাসন।

এর পর থেকে কাজাখস্তানও তার স্বৈরাচারী পথে এগিয়ে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের এপ্রিলে সেখানে নতুন একটি গণমাধ্যম আইন কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয় বিদেশি গণমাধ্যম ও তাদের প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি বাতিল করার ক্ষমতা পায়।

এ দুটি ঘটনা দেখায়, চীন কীভাবে বিভিন্ন পটভূমিতে নিজের বক্তব্য ও বয়ানকে মানিয়ে নেয়। এই অভিযোজনক্ষমতাই আসলে তার শক্তি।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

  • জুলিয়া সিওরাতি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ফেলো।