‘সিন্ডিকেট’ ছেড়ে আফসোস করি: তাসনুভা তিশা
- আপডেট সময় : ০৫:৪৬:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
প্রথম আলো :
কেমন আছেন?
তাসনুভা তিশা: খুব একটা ভালো নেই। শুক্রবার থেকে আমার স্বামী অসুস্থ। সেদিন রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। কিছু টেস্ট করাতে হয়েছে। রাতে হাসপাতালে ছিলাম। সেখান থেকেই মাত্র বাসায় এলাম।
প্রথম আলো :
তাহলে কি পরে কথা বলব…
তাসনুভা তিশা: সমস্যা নেই, বলেন; বরং এখনই কিছুটা ফ্রি। বাচ্চারা এখনো ঘুমাচ্ছে। ওরা উঠলে কথা বলতে আরও সমস্যা হতে পারে। সমস্যা নেই, কথা বলতে পারব।

অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো :
আজ শুটিং বাতিল?
তাসনুভা তিশা: আজ শুটিংয়ের শিডিউল ছিল; কিন্তু আগেই বাতিল হয়েছে। নতুন একটি চ্যানেলের ধারাবাহিক নাটক করছি। পরিচালক বাপ্পী খান। নাম টানাপোড়েন। পারিবারিক গল্প। এটা বাড়তি ব্যস্ততা যোগ করেছে।
প্রথম আলো :
রাতে হাসপাতালে ছিলেন, সন্তানেরা কার কাছে ছিল?
তাসনুভা তিশা: আমি বাইরে গেলে আমার আম্মাই বাচ্চাদের দেখাশোনা করেন। রাতে আম্মার কাছেই ছিল বাচ্চারা। পরিবার থেকেই সাপোর্ট পাই। যে কারণে নিয়মিত পরিবার সামলিয়ে শুটিং করতে পারছি।
প্রথম আলো :
আপনাকে তো ধারাবাহিক নাটকে খুব একটা দেখা যায় না…
তাসনুভা তিশা: সর্বশেষ দুই বছর আগে ‘মা বাবা ভাই বোন’ সিরিয়ালে কাজ করেছিলাম। এরপর দীর্ঘদিন ধারাবাহিকে কাজ করি না। এখানে প্রতি মাসে সময় দিতে হয়। শিডিউল মেলানো কঠিন হয়ে যায়। এ ছাড়া ধারাবাহিকে মনমতো গল্প, নির্মাতা না পাওয়াসহ নানা পরিস্থিতির কারণে কম কাজ করেছি। আমি সিঙ্গেল নাটকই বেশি করেছি।
প্রথম আলো :
কিন্তু ধারাবাহিক নাটক এখন তো সেই অর্থে দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে না?
তাসনুভা তিশা: কিছু ভালো কাজ যে হচ্ছে না, তা নয়। আসলে সিঙ্গেল নাটকে তেমন ভালো গল্প পাচ্ছিলাম না। আর অন্য সময়ের চেয়ে এখন কাজের সংখ্যার অবস্থাও ভালো নয়। এবার যখন ধারাবাহিকের প্রস্তাব পেলাম মনে হলো, পারিবারিক গল্পের নাটকটিতে অভিনয় করা যায়। এটা দারুণ একটি গল্প।
প্রথম আলো :
আরশ খানের সঙ্গে একাধিক নাটক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, হঠাৎ জুটি ভাঙল কেন?
তাসনুভা তিশা: আরশ খানের সঙ্গে একাধিক নাটকে কাজ করেছি, দর্শকও আমাদের জুটি বেশ পছন্দ করেছেন। গত বছর অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। তবে একসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে গেলে কখনো কখনো বোঝাপড়ার ঘাটতি বা তালমিলের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আমার মনে হয়েছিল, অতিরিক্ত একসঙ্গে কাজের কারণে এমন কিছু বিষয় ঘটছিল। কোনো জুটি যদি কোনো সমস্যার মধ্যে থাকে, তাহলে ভালো কাজ সম্ভব হয় না। সে কারণেই আমি নিজেই একটু বিরতি নিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, কিছুটা সময় নিয়ে আবার নতুন করে শুরু করাই ভালো। এখন মনে হচ্ছে, সময় নেওয়াটা ঠিক আছে—এবার হয়তো আবার একসঙ্গে কাজ করব।
প্রথম আলো :
একসঙ্গে কাজ নিয়ে কি আরশ খানের সঙ্গে আপনার কথা হয়?
তাসনুভা তিশা: আমাদের সেভাবে কথা হয় না। আমাদের সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া কেউ একজন তুমি নাটকটি এপ্রিলে শুটিং করা। তারপর দুজন দুজনের মতো অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত। একসঙ্গে কাজ করলে তো কথা হবেই। এর মধ্যে কয়েকজন পরিচালক বলেছেন আমাদের জুটি নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে। কেউ কেউ জানতেও চেয়েছেন কাজ করব কি না। সরাসরিই বলেছি, আমার কাজ করতে সমস্যা নেই। কদিন আগেও দেখা হলো। আমরা একটা নাটকের জন্য পুরস্কার পেলাম।
প্রথম আলো :
মোশাররফ করিম থেকে পার্থ শেখসহ অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করছেন…
তাসনুভা তিশা: আমার একটাই চাওয়া—ভালো কাজ। সহশিল্পী যে প্রজন্মেরই হোন না কেন, কোনো সমস্যা নয়। সবার সঙ্গেই মানিয়ে নিতে পারি। ভালো চিত্রনাট্য পেলে নিজেকে ফিট মনে করি। কাজের জায়গায় কমফোর্ট জোনটা সবার আগে চাই। ভালো মানের কাজের জন্য এটা জরুরি। যে কারণে মোশাররফ করিম ভাই, নিলয় ভাই; তরুণদের মধ্যে পার্থসহ অনেকের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে।

অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে
প্রথম আলো :
ফেসবুক থেকে আপনার নাকি কোনো আয় নেই?
তাসনুভা তিশা: আমিই মনে হয় একমাত্র অভিনেত্রী, যাঁর ফেসবুক থেকে আয় নেই (হাঁ…হাঁ)। এখন সেই অর্থে তেমন আলোচিত নয় বা টুকটাক কাজ করেন আবার নতুন অনেকেই শুনি ফেসবুক থেকে অনেক টাকা আয় করেন। মনিটাইজেশন নাকি বলে, সেটাই আমার করা নেই। আমি আসলে অলস আছি। কিছুটা বোকাও বলা যেতে পারে। এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? আবার এটাও মনে হয়, টাকার জন্য শুটিং সেটে এসে রিলস, ভিডিও, লাইভ করলে অন্যরা কী বলবে। এগুলো তো বানানো ঠিক নয়। এ ছাড়া শুটিংয়ে দম ফেলার সময়ই থাকে না। সময় পেলেই পড়ি।
প্রথম আলো :
তাহলে শুটিং সেটে বসে লাইভ করলেন কী করে?
তাসনুভা তিশা: সেটা ছিল ওভিসির (অনলাইন ভিডিও কমার্শিয়াল) শুটিং। শুটিংয়ে অনেক সময় ছিল। সময়ই যাচ্ছিল না। আরেকটা বিশেষ কারণ ছিল, আমার কাছের বন্ধু মনোজ প্রামাণিকের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা। সে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মাত্র দুই দিন আগেই ফিরেছিল। ওর বিদেশ যাওয়ার আগেও আমাদের একসঙ্গে কাজ হয়েছিল। আমরা কেউই জানতাম না সেদিন একসঙ্গে শুটিং। মজা করেই সময়টা কাটিয়েছি। তা ছাড়া আমি শুটিংয়ে ভিডিও বানানো—এসব কখনোই করি না। রিলস বানালেও ছবি দিয়ে বানাই। আমি সব সময় ভালো কাজ করতে চাই। যে কারণে শুটিংয়ে আমার কাজের প্রতি মনোযোগ থাকে সবচেয়ে বেশি।

নাটকের পোস্টারে আরশ খান ও তাসনুভা তিশা
প্রথম আলো :
ওয়েব সিরিজ ‘আগস্ট ১৪’–এর পর সেভাবে আর ওটিটিতে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারলেন না। মন খারাপ হয়?
তাসনুভা তিশা: না। মন খারাপ হয় না। পরে কিন্তু আমি আরও বেশ কিছু কাজ করেছি। এখনো নিয়মিত কাজ করেই যাচ্ছি। এখন ওটিটির ভালো কাজে আমাকে না ডাকলে তো কিছু করার নেই। আমি তো শুধু শুধু ওটিটিতে নাম লেখাব না। আমি চাই, আগস্ট ১৪কে ছাড়িয়ে যাবে, এমন কোনো কাজ। তবে ওটিটির একটা ঘটনা প্রায়ই আমার মন খারাপ করে দেয়, প্রায়ই অনুশোচনা হয়।
প্রথম আলো :
সেটা কী?
তাসনুভা তিশা: শিহাব শাহীন ভাইয়ের সিন্ডিকেট ওয়েব সিরিজে আমার অভিনয় করার কথা ছিল। আমাকে ডেকেছিলেন; কিন্তু আমি সেই সময় না করে দিয়েছিলাম। এটা আমি নিজের সিদ্ধান্তে করিনি। তখন আমার বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছিল। বিয়ে নিয়ে পারিবারিকভাবে সবাই একটা সিদ্ধান্তে এসেছিলাম। আমি জীবনে বহু কাজ ছেড়েছি; কিন্তু কোনো অনুশোচনা নেই। শুধু সিন্ডিকেট ছেড়ে দেওয়ায় মন খারাপ হয়। এটার জন্য আমি আফসোস করি।

অভিনেত্রী তাসনুভা তিশা। ছবি: ফেসবুক থেকে















