স্বপ্ন নিয়েতে লিখতে এসে যেভাবে নিজেকে ‘আবিষ্কার’ করলাম
- আপডেট সময় : ০৫:৫৯:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ২ বার পড়া হয়েছে
আমার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে। তবে সেই ডিগ্রিগুলোর সঙ্গে যে পেশাগুলোর সম্পর্ক থাকার কথা, আমার তার কোনোটিই বেছে নেওয়া হয়নি। বলা যায় একেবারে ভিন্ন পথে হেঁটেছি। বৈশ্বিক উষ্ণতা, পরিবেশ বিশ্লেষণ আর ল্যাবরেটরির পরিসংখ্যানের জগৎ থেকে হঠাৎই আমি এসে পড়েছি সাংবাদিকতার সম্পূর্ণ আলাদা দুনিয়ায়।
এই পরিবর্তনটিকে সাধারণ ‘ক্যারিয়ার বদল’ নয়, বরং ‘অনুধাবন’ বলতে চাই। প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া এই যাত্রার মূল কারণ যদি এক কথায় বলতে হয়, বলতে হবে—‘প্রথম আলো’। পুরো গল্পটা বুঝতে চাইলে একটু পেছনে ফিরে দেখা দরকার।
সৃজনশীল কাজে আমার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। লিখতাম, গান গাইতাম, ছবি আঁকতাম। কিছু পুরস্কারও পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে সেই ধারা বজায় ছিল। সুযোগ পেলেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতাম, লেখালেখি করতাম।
ভূগোলের জটিল ভাষার ভিড়ে এসবই ছিল আমার শান্তি খোঁজার উপায়। মাঝেমধ্যে ভাবতাম, আসলে কী ভালো লাগে আর আমি কী করছি—এই হিসেব মিলছে তো? কিন্তু বাস্তবতার নানা পরিক্রমায় আমাকেও বোঝানো হয়েছিল, চাকরি বা ক্যারিয়ারে সৃজনশীলতার নাকি কোনো জায়গা নেই।
তৃতীয় বর্ষে পড়ার হঠাৎই প্রথম আলোর রোববারের ক্রোড়পত্র ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে ফিচার লেখক হিসেবে কাজ করার সুযোগ আসে। তার আগে কোনো সংবাদমাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। এখান থেকেই সাংবাদিকতাকে ‘বোঝা’র শুরু।
পত্রিকার কাজে স্বপ্ন নিয়ে পাতার সম্পাদক মো. সাইফুল্লাহ ভাইয়ের সঙ্গে প্রায়ই দেখা হতো প্রথম আলোর অফিসে। কাছ থেকে দেখে অনেক কিছু শিখেছি। দেখেছি—একটি লেখা কীভাবে সম্পাদনার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ছাপাখানায় পৌঁছায়।
সাংবাদিকতার ছাত্ররা হয়তো এসব ক্লাসে শেখে। কিন্তু আমি শিখেছি অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে—কখনো পর্যবেক্ষণ থেকে, কখনো কাজের মাধ্যমে, আবার কখনো সাইফুল্লাহ ভাইকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে।
প্রথম আলোতে আমি লিখেছি প্রায় দু বছর। এই সময়টা আমাকে নিজের আগ্রহ ও পেশাগত দিক নিয়ে একদম পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে। বুঝতে পেরেছি, আমি সাংবাদিকতার প্রক্রিয়াটাই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করি।
সেই উপলব্ধি থেকেই স্নাতক শেষে স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি পূর্ণকালীন সাংবাদিকতায় মনোযোগ দিই। পরে কাজ করেছি একটি জাতীয় দৈনিক ও একটি টেলিভিশন চ্যানেলে।
তবে এরই মধ্যে আরও একটি ঘটনা ঘটে যায়। স্নাতকোত্তরের মাঝপথে দিয়েছিলাম বিসিএস পরীক্ষা, আর প্রিলিমিনারিতেও উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় একদিন হঠাৎ মনে হলো—এই পথটা কি সত্যিই আমার জন্য?
চারপাশে সবাই যখন সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা খুঁজছে, তখন আমার মনে হচ্ছিল, আমি খুঁজছি অন্য কিছু—অর্থ বা নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থপূর্ণতা। সাংবাদিকতাকে আরও গভীরভাবে জানার ও গবেষণার দৃষ্টিতে বোঝার ইচ্ছেটাই ভেতরে-ভেতরে দানা বাঁধছিল।
সেই আগ্রহ থেকেই পাড়ি দিই যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছি।
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহকে আরও বিস্তৃত রূপ দিতে স্নাতকোত্তরের পর আরও কয়েকজন মিলে প্রতিষ্ঠা করি ‘ডালাস বার্তা’, উত্তর টেক্সাসের প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য একটি দ্বি-সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা। বর্তমানে আমি এর নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। সংবাদ সম্পাদনা, ফিচার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে প্রকাশনার প্রতিটি ধাপে সরাসরি যুক্ত আছি।
স্নাতকোত্তরে পড়ার সময় সাংবাদিকতার গবেষণায় গভীরভাবে যুক্ত হই। সংকট, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে সংবাদ কীভাবে উপস্থাপিত হয় এবং তা মানুষ কীভাবে গ্রহণ করে—এই বিষয়গুলো আমার গবেষণার মূল বিষয় ছিল।
আমার গবেষণার কাজগুলোর স্বীকৃতি হিসেবে আমি সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগবিষয়ক গবেষণা সংস্থা এইজেএমসি (অ্যাসোসিয়েশন ফর এডুকেশন ইন জার্নালিজম অ্যান্ড ম্যাস কমিউনিকেশন) থেকে জিন বার্ড অ্যাওয়ার্ড পাই।
এটি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নগর সাংবাদিকতা গবেষণায় অন্যতম বড় সম্মান হিসেবে গণ্য হয়। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি আঞ্চলিক সম্মেলনেও আমার গবেষণা সেরার পুরস্কার পায়। আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আমাকে থিসিসের জন্য গবেষণা অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
এসব অর্জন আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে সাংবাদিকতা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে ও গবেষণাকে ভবিষ্যতের পথ হিসেবে বেছে নিতে। তাই বর্তমানে আমি পিএইচডির প্রস্তুতি নিচ্ছি।

















