বিসিএসে রিপিট ক্যাডার বন্ধ কেন জরুরি, এতে লাভ কার?
- আপডেট সময় : ০৫:৫৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ ১ বার পড়া হয়েছে
একটি বিসিএসে অংশ নেন লাখ লাখ প্রার্থী। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার বিস্তর এক কর্মযজ্ঞে চলে যায় দুই থেকে তিন বছরের বেশি সময়। ফল প্রকাশের পর দেখলেন, তিনি পেয়েছেন এখন যে পদে আছেন, সেই পদ। এটি এখন রিপিট ক্যাডার নামে পরিচিতি পেয়েছে। এটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ৪৪তম বিসিএসে। একই ক্যাডারে সুপারিশ পেলে কোনো যুক্তিতেই তা কাজে আসে না। সময় ও পদ নষ্ট—সর্বোপরি প্রার্থীর মনোবল নষ্ট, এমনকি যে পদ পেলেন না, এর জন্য তিনিও চরম হতাশ হন তিন থেকে চার বছরের যুদ্ধ শেষে।
৪৪তম বিসিএসের প্রথম ফল প্রকাশিত হয় গত বছরের ৩০ জুন। এরপর দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছেয়ে গেছে এই বিসিএসে রিপিট ক্যাডার হয়েছে অনেক। এ নিয়ে বেশ হতাশা প্রকাশ করেন চাকরিপ্রার্থীরা। পরে আমি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) এ বিষয়ে সঠিক তথ্যের জন্য কয়েক দফা যোগাযোগ করি। প্রথমে তথ্য দিতে কিছুটা দেরি করার পর আমি বোঝাতে সক্ষম হই, সঠিক তথ্য না দিলে রিপিট ক্যাডারের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে।
পরে পিএসসির উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রিপিট ক্যাডার নিয়ে ৩৭২ জনের তালিকা চূড়ান্ত করেছে পিএসসি। পরে এ নিয়ে নানা ফাইল আদান–প্রদানের পর পিএসসি ৪৪তম বিসিএসের সম্পূরক ফল প্রকাশ করেছে। নতুন এই ফলে ১ হাজার ৭১০টি শূন্য পদের বিপরীতে ১ হাজার ৬৮১ প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডারে সাময়িকভাবে (প্রভিশনালি) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
পিএসসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৪৪তম বিসিএসের ফল গত ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। পরে কমিশনের নির্ধারিত পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ওই ফলে মনোনীত ৩০৩ প্রার্থী লিখিতভাবে ঘোষণা দেন যে তাঁরা তাঁদের প্রাপ্ত ক্যাডার পদে বা পছন্দক্রমের নিম্নতর কোনো ক্যাডারে যোগদান করবেন না। এই পরিস্থিতিতে পিএসসি ২৬০ প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা থেকে বিরত থাকে। একই সঙ্গে ৪৩ প্রার্থীকে তাঁদের বর্তমান ক্যাডারের চেয়ে উচ্চতর পছন্দক্রমের পদে সাময়িক মনোনয়ন প্রদান করা হয়। উদ্ভূত শূন্য পদগুলো পূরণে মেধাক্রম ও প্রচলিত কোটার বিধান অনুসরণ করে কমিশন নতুনভাবে সম্পূরক ফল প্রস্তুত করে। এর ভিত্তিতে ৪৪তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৮১ জনকে সাময়িকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
রিপিট ক্যাডারের লাভ–ক্ষতি
এক প্রার্থী বলছিলেন, তিনি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছিলেন, ৪৪তম বিসিএসেও তা–ই। এতে তাঁর কোনো লাভ নেই। এটি না হয়ে তিনি অপর কোনো ক্যাডার পেলে হয়তো ভেবে দেখতেন, যোগ দেবেন কি না। এটি তো তাঁর কথা। ওই প্রার্থী বলেন, ‘আমি আগের বিসিএসে যা পেয়েছি, তা তো কখনোই আবার বেছে নেব না। আবার আমাকে একই ক্যাডারে সুপারিশ করার অর্থ হলো, আরেকজন বঞ্চিত হলো। মানে, আমাকে সুপারিশ না করে আরেক প্রার্থীকে এই পদে দেওয়া যেত।’ ওই প্রার্থী বলেন, ‘এটা আমার একার কথা নয়, সবার দাবি। কখনোই রিপিট ক্যাডার হওয়া যুক্তির কথা নয়। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারের দক্ষ কর্মী দরকার, প্রার্থীর চাকরি দরকার। রিপিট ক্যাডার হলে সবার পণ্ডশ্রম। শুধু সময় নষ্ট। কেননা, আগে একই ক্যাডার পাওয়া কেউ আবার রিপিট ক্যাডারে সুপারিশ পেলে যোগ দেবে না। সেটার কোনো যুক্তি নেই। সে জন্য কোন প্রার্থী কোন পদ পেলেন, সেই তথ্য পিএসসির কাছেই থাকে। তাই রিপিট ক্যাডার বন্ধ খুব কঠিন কিছু নয়। এই উদ্যোগ এখন থেকে পিএসসিকে নিতে হবে।’
কিছু সুপারিশ
রিপিট ক্যাডার বন্ধে পিএসসি ডেটাবেজ শক্তিশালী করতে পারে। আবার একই ক্যাডার সুপারিশ শুধু শুধু সময় নষ্ট বলেই আমার মনে হয়। এই পদে আর কেউ সুপারিশ পেলে তিনি যেমন নতুন একটি চাকরি পাবেন, তেমনি সরকার পাবেন যোগ্য কর্মকর্তা। তাই পিএসসির উচিত রিপিট ক্যাডার বন্ধ করা। এটা কেবল ক্যাডারে নয়, নন–ক্যাডারেও জরুরি। এ ছাড়া অনেক সময় আমাকে অনেকে বলেছিলেন, তিনি ৩৯তম বিসিএস থেকে চাকরি পেয়েছেন, সেটি চিকিৎসকের বিশেষ বিসিএস। একই ব্যক্তি ৩৮তম বিসিএসেও চাকরি পান। যেহেতু ৩৮তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি আগে হয়, কিন্তু ফল প্রকাশিত হয় ৩৯তম বিসিএসের পর, তাই ৩৮তম বিসিএসে সিনিয়রিটি আগে হবে। সে জন্য ওই প্রার্থী ৩৯তম বিসিএসের চাকরি ছেড়ে ৩৮তম বিসিএসে যোগ দেন। এই যে রিপিট ক্যাডার, সময় নষ্ট, আরেকটি পদ নষ্ট—সব মিলিয়ে এটা চাকরিপ্রার্থীর ক্ষতি, রাষ্ট্রের ক্ষতি, সময় ও অর্থ সব নষ্ট। এ জন্য চাকরিপ্রার্থীকে দায়ী করা যায় না। তাঁর দরকার চাকরি ও সময়মতো সিনিয়রিটি। তাই এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে সরকার চাইলে বিধি চাকরিপ্রার্থীবান্ধব করতে পারে। এতে আসলে সবার লাভ। রাষ্ট্র যেমন তার যোগ্য প্রার্থী পাবে, তেমনি প্রার্থীও লাভবান হবেন।
















